বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
Homeঅপরাধসাবেক স্ত্রীকে চাকুরিচ্যুত ও হয়রানি করতে ১৯ টি মামলা

সাবেক স্ত্রীকে চাকুরিচ্যুত ও হয়রানি করতে ১৯ টি মামলা

spot_img

শেষ প্রতিনিধি:কে সেই এম এ মুহিত? যে স্ত্রীকে খোলা তালাক দিয়ে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করে চলেছেন। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের মেয়ে শাহনাজ পারভীন, পেশায় চাকুরি করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে পরিবার কল্যান পরিদর্শীকা হিসেবে।

অনুসন্ধান ও নানান তথ্যের মাধ্যমে জানা যায়, এম এ মুহিত মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার তেলিবিল ইউপির বাকচর গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহনাজ পারভীনের দুঃসম্পর্কের এক মামা রফিকুলের মাধ্যমে ঢাকায় পড়ালেখা কালীন ২০১৩ইং সালে পরিচয় হয় তার সাথে।
নিজেকে প্রথমে পরিচয় দেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সহাকারি সচিব এবং এরপর পরিচয় দেন তৎকালীন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর পিএস হিসেবে।
পরে রফিকুলের মাধ্যমে শাহনাজ পারভীনের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান তিনি। কিন্তু গোপন রাখেন তার প্রথম স্ত্রী সন্তানের কথা। শাহনাজের পরিবারকে বলেন উনার স্ত্রী মারা গেছেন, নেই কোন সন্তানাদি।
এসমস্ত মিথ্যা পরিচয় ও প্রতারণা করে ২০১৩ইং সালের আগষ্ট মাসের ১৪ তারিখে বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার জিউধারা ইউনিয়নের শাহজাহান মীরের মেয়ে শাহনাজ পারভীন (২৯)কে বিয়ে করেন এম এ মুহিত।
বিয়ের কিছুদিন পর তার পূর্বে বিবাহ ও স্ত্রী সন্তান রয়েছে বলে প্রকাশ পায় এবং চরিত্র উন্মোচন হতে থাকে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের কাছে।
বিয়ের পর থেকে প্রাশই তিনি গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে থেকে বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক করে সেগুলো আবার রেকর্ড করে এনে স্ত্রী শাহনাজ পারভীনকে শুনান। এসবের বিষয়ে কোন কথা বলতে গেলেই রেগে এম এ মুহিত বলেন- এগুলো আমার কাজ, এগুলোয় বাঁধা দিতে আসবে না। এসময় শাহনাজ পারভীন নারায়নগঞ্জের সদর উপজেলার পৌর পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে ১৫/০৪/২০১৮ ইং তারিখে যোগদান করেন।
এভাবে চলতে থাকা অবস্থায় স্ত্রী শাহনাজ পারভীন প্রতিবাদ করলে তাকে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে এম এ মুহিত। এই অবস্থায় তাদের ঘরে ২০/০৫/২০১৮ ইং তারিখে মুশফিকা মেহনাজ নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
সন্তান হওয়ায় শাহনাজ পারভীন ভেবেছিলেন সুখের মুখ দেখবেন এবং তার স্বামীর চরিত্র ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি বরং তার খারাপ কার্যকলাপ আরো বাড়তে থাকলে শাহনাজ পারভীন তার স্বামীর বড় ভাই কাইয়ুম চৌধুরীর কাছে নালিশ করেন।
কাইয়ূম চৌধুরী বেশ কয়েকবার পারিবারিক ভাবে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য চেষ্টা করেন।
কিন্তু মিমাংসা করার চেষ্টা করলে এম এ মুহিত তা তোয়াক্কা না করে উল্টো নিজের বড় ভাইকে বলেন সন্তান তুমি নিয়ে যাও প্রয়োজনে তুমি তাকে (শাহনাজ পারভীন)কে বিয়ে করে ফেলো বলে জানান ভুক্তভোগী শাহনাজ পারভীন । আমি শাহনাজকে ছেড়ে দেব, তাকে রাখবো না বলে সাফ জানিয়ে দেয় এম এ মুহিত । কিন্তু সংসার করার জন্য শাহনাজ পারভীন অনেক অনুনয় বিনয় করলেও মুহিত বলেন- তুই চলে যা, আমি তোকে আর রাখবো না।
অবশেষে তাদের কন্যা্র ২০ মাস বয়সে শাহনাজ পারভীনের অমতে প্রথমে এম এ মুহিত নোটিশ পাঠায় তারপর ২৭/০১/২০২০ ইং সালে পারিবারিকভাবে শাহনাজ পারভীনকে খোলা তালাক প্রদান করে।
এখানেই শেষ নয়, শুরু হয় এম এ মুহিতের ভিন্নধর্মী খেলা। তালাকের ৪মাস পর সে আবার বিভিন্ন ভাবে শাহনাজ পারভীনকে পূনরায় তার ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু শাহনাজ পারভীন ও তার পরিবার তা মেনে নেয় নি।
পরে সবার পরামর্শ এবং অফিসের কলিগদের সহযোগিতায় পূনরায় দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি দেন শাহনাজ পারভীন। পরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খায়রুল আলম মোল্লার ছেলে মাহবুব হোসেন মোল্লার সাথে বিয়ে হয় শাহনাজ পারভীনের।
বিয়ের ৩দিন পর এম এ মুহিত শাহনাজ পারভীনের শশুরবাড়িতে চেয়ারম্যান মেম্বার পাঠায় যে তার স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে চলে এসেছে। সেখানে শাহনাজ পারভীন ও তার স্বামীসহ অন্যান্যরা এম এ মুহিতের সাথে খোলা তালা্কের সব প্রমাণাদি দেখায় এবং তারা চলে যায়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অনেক সাংবাদিক পাঠায় এম এ মুহিত সব প্রমাণাদি দেখে তারাও চলে যায়। এর পরবর্তীতে মাদারীপুর সদর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তারাও চলে আসেন।
এরপরই এম এ মুহিত শাহনাজ পারভীনের দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর ঢাকা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে তাকে আটক করান। সে মামলায় প্রায় ৫ মাসের মতো জেল খাটেন শাহনাজ পারভীনের দ্বিতীয় স্বামী মাহবুব হোসেন মোল্লা।
যখন জামিন হচ্ছিল না, তখন এম এ মুহিত মাহবুবের পরিবারকে প্রস্তাব দেন যে, তারা যদি শাহনাজ পারভীনকে রাজি করিয়ে তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে মাহবুবের জামিন হবে। তা না হলে কারো ক্ষমতা নেই তার জামিন করানোর।
এম এ মুহিত বাদী হয়ে এরপর আবার হুমকি ধামকীর অভিযোগ এনে মাহবুব হোসেন, তার ভাই ডাঃ ময়নুল হোসেনকে আসামী করে মোহাম্মাদপুর থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
এসমস্ত বিষয়ে হয়রানীর শিকার হয়ে মাহবুব হোসেনের পরিবার বাধ্য হয়ে শাহনাজকে বলেন মা তুমি আমাদের বাঁচাও তোমার সাথে আমাদের ছেলের তালাক না হলে আমরা আমাদের ছেলেকে হারাবো। অবশেষে বাধ্য হয়ে রাজি হয় শাহনাজ পারভীন। এরপর মাহবুব হোসেনের জামিন হয়।
পরে মাহবুব হোসেনের সাথে শাহনাজের খোলা তালাক সম্পন্ন হয়, যাতে শাহনাজ দেনমোহর সহ কোন কিছু না নিয়েই দ্বিতীয় সংসার ত্যাগ করেন বলে জানান শাহনাজ।
দুটি মামলাই মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে শেষ হয়েছে অনুসন্ধানে জানা যায়। এরই মাঝে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন এম এ মুহিত। প্রথমে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহনাজ পারভীনকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একাধিক অভিযোগ দাখিল করায় সেটা বিভাগীয় মামলা হয় এবং শুনানি হয়, তাতে শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
শাহনাজ পারভীন মাদারীপুর জেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, সদর, মাদারীপুরে পরিবার কল্যান পরিদর্শীকা হিসেবে চলতি দায়িত্বরত ছিলেন।
সেখান থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে তাকে গোপালগঞ্জের কুটালীপাড়া থানার স্বাস্থ্য ক্লিনিকে বদলী করা হয় বলে জানান শাহনাজ পারভীন।
এদিকে তালাকের পর থেকে একের পর এক শাহনাজ পারভীন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৯ টি মামলা দায়ের করেন এম এ মুহিত। এর মধ্যে ১৭ টি মামলার বাদী এম এ মুহিত নিজে ১টি মামলার বাদী এম এ মুহিতের স্ত্রী আরেকটি মামলার বাদী বরিশালের আছমা বেগম। শাহনাজ জানান, আছমা বেগম নামে কাউকে চিনতেনই না অথচ তাকে দিয়ে একটি মামলা চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ দায়ের করান এম এ মুহিত এমনটাই জানান শাহনাজ পারভীন।
উল্লেখিত মামলায় শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি হলে ডিউটিরত থাকাকালীন তাকে আটক করা হয়৷
পরের দিন তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এই মামলাসহ সিলেট সাইবার ট্রাইবুন্যাল আদালতে ১টি মামলা দায়ের করেন যা কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জকে তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়। মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা এবং মৌলভীবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শাহনাজ পারভীনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মারপিটসহ নানা অভিযোগ এনে ১টি মামলা করেছেন যা জেলা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
এগুলো নিয়ে মোট ১৯টি মামলার মধ্যে ১২ টি মামলা মিথ্যা প্রমানিত হয়ে খারিজ করেছেন আদালত। ৭টি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী নারী শাহনাজ পারভীন।
৫বছর ৫ মাসের শিশু সন্তান মুশফিকা মেহনাজ, অসুস্থ মা বাবা ভাইকে নিয়ে একটি অনিশ্চিত জীবন নিয়ে কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় দৌড়ে চলেছেন শাহনাজ পারভীন। কোনভাবেই শান্তি দিচ্ছেন না তার সাবেক স্বামী এম এ মুহিত।
কান্না জড়িত কন্ঠে শাহনাজ বলেন- এম এ মুহিত আমাকে বিভিন্ন ভাবে অনেকবারই বলেছিল, তোকে শান্তিতে থাকতে দিব না, তোকে চাকরিচ্যুতও করবো প্রয়োজনে তোকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবো। তুই আমার কিছুই করতে পারবি না। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাংবাদিক সব আমার কথায় উঠে বসে। তোকে কেউ সহযোগিতা করতে পারবেনা। যেই আসবে তার পরিনতিও খারাপ করে ছাড়বো বলে বারংবারই হুমকি দেন এম এ মুহিত এমনটাই জানান শাহনাজ পারভীন।
এছাড়া অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এ পর্যন্ত যে বা যারা শাহনাজ পারভীনকে সহযোগিতা করতে গিয়েছেন বা পাশে দাড়িয়েছেন তাদের কোন না কোন ভাবে মামলা দিয়ে হয়রানিসহ হুমকি ধামকী দিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জানান, ভুক্তভোগী শাহনাজ পারভীনকে সাহায্য করতে গেলে তাকে তো মামলা দেনই সাথে তার পরিবারের সদস্যদেরও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে হয়রানির মধ্যে ফেলেন এম এ মুহিত। এমনকি যে সমস্ত মামলা করেন সেগুলোতে যাকে খুশি সাক্ষী হিসেবে দিয়ে দেন।
সাক্ষী দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে বলেন- আপনাকে সাক্ষী করেছি, আপনি আমার জন্য সাক্ষীটা দিয়ে দিবেন। তাদের দূর্বল দিক খোঁজে বের করে সাক্ষী দিতে বাধ্য করেন। আবার কেউ যদি সাক্ষী দিতে অসম্মতি জানায় তাহলে থাকে ফাঁসিয়ে ফেলে এম এ মুহিত এমনটাই তথ্য অনেকে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে।
এবিষয়ে এম এ মুহিতের বক্তব্য নেয়ার জন্য ১৮ তারিখ রাত ১০:০৮ মিনিট থেকে উনার ০১৭১৬-১৮৮১৮৩ নাম্বারে কয়েকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেন নি। যার কারনে এম এ মুহিতের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ২য় পর্বে শীঘ্রই আসছে আরো বিস্তারিত।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here