শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকায় স্প্রে পার্টি আতংকে ভুগছেন সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রতিদিন রাতেই কোন না কোন বাসায় হানা দিচ্ছে স্প্রে পার্টি। একের পর এক বাসায় চেতনানাশক স্প্রে নিক্ষেপ করে সাধারণ মানুষকে অজ্ঞান করে নিয়ে যাচ্ছে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এতে রাত জেগে পাহারা দিয়েও রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
ভয়-আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন বাসা-বাড়ির লোকজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একের পর এক স্প্রে পার্টির সদস্যরা এমন কর্মকান্ড চালিয়ে আসলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহীনির তৎপরতা না থাকায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, গত ১ মাসে পৌর এলাকার দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া, পূর্ব বড়চর, মহলুল সুনাম, সাবাসপুরসহ বিভিন্ন পাড়ায় প্রায় ২০টি বাসায় স্প্রে নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন রাতেই দৃর্বৃত্তরা বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে। শুরুতেই দরজা, জানালা খোলে তারা স্প্রে নিক্ষেপ করছে। এতে মূহুর্তেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন পরিবারের লোকজন।
তাদের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না পুলিশ, ডাক্তার ও সাংবাদিকের বাসাও। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষসহ দুই পুলিশ সদস্য ও এক সাংবাদিকের বাসায় দূর্বৃত্তরা স্প্রে নিক্ষেপ করে টাকা ও মূল্যবান জিনিস পত্র হাতিয়ে নিয়েছে। অসুস্থ্য হয়ে তাদের পরিবারের লোকজন হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টায় শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুর রকিবের বাসায় স্প্রে নিক্ষেপ করে দৃর্বৃত্তরা। এতে তার পরিবারের লোকজন অজ্ঞান হয়ে পড়লে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। ১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে একই কায়দায় উপজেলার লেঞ্জাপাড়া এলাকার সৈয়দ এবাদুল হক শাহীনের ভাড়া দেওয়া বাসায় চেতনানাশক স্প্রে করে দৃর্বৃত্তরা। এতে বাসার লোকজন অজ্ঞাত হলে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আরিফ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা আক্তার (৪০), মেয়ে ফারিহা আক্তার (১৩), ছেলে ফাইয়াদ মন্ডল (৭) ও পারভীন মন্ডলকে (৫) হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ আগস্ট দিবাগত রাতে পৌর এলাকার ব্যবসায়ী কামরুল হক চৌধুরীরর পরিবারের সদস্যরা রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরে ঘুমের মধ্যে তারা অচেতন হয়ে পড়লে বাসার রান্নার ঘরের পেছন দিয়ে স্প্রে পার্টি চক্রের সদস্যরা ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা বাসায় থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ১২ আগস্ট রাতে একই উপজেলায় হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের এএসআই জুয়েল মিয়ার ভাড়াটিয়া বাসায় চেতনানাশক স্প্রে নিক্ষেপ করে পরিবারের লোকজনকে অজ্ঞান করে মোবাইল, নগদ টাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। ৩ আগস্ট শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাস্থ দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া সাকিনের সাবাসপুর সংলগ্ন মরহুম ডাক্তার এম এ আব্দুর রউফ এর বাসার জানালার গ্রিল কেঁটে ৬ জনের মুখমন্ডলে স্প্রে নিক্ষেপ করে। এতে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়লে ৪ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এর আগে ২০ জুলাই জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার লেঞ্জাপাড়া গ্রামে এক সাথে ৪টি বাসায় পরিবারের সদস্যদের চেতনানাশক স্প্রে নিক্ষেপ করে মালামাল লুটপাট করে দৃর্বৃত্তরা। এছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন রুমি, পুরান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান, ডাক্তার মাসুক আলী, বিরামচর গ্রামের মোঃ জবেদ মিয়া, আব্দুল কাদির, উদয়ন আবাসিক এলাকার মাওলানা আব্দুস সহিদের বাসাসহ প্রায় ২০টি বাসায় স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়। পৌর এলাকার পশ্চিম বিরামচর গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ প্রতিদিন রাতেই দূর্বৃত্তরা কারো না কারো বাসায় প্রবেশ করছে। শুরুতেই তারা চেতনানাশক স্প্রে মেরে পরিবারের লোকজনদের অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর তারা চুরি করে জিনিসপত্র নিয়ে যায়’।
পৌর এলাকার বাসিন্দা মতি মিয়া বলেন, ‘অজ্ঞান পার্টির আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারি না। পাড়ায় পাড়ায় পাহারাদার বসানো হয়েছে। তারপরও একের পর এক ঘটনা ঘটছে। আমরা চরম আতংকের মধ্যে আছি’। একই এলাকার শাহীন মিয়ার বাসার ভাড়াটিয়া রেলওয়ের গেটম্যান আরিফ মিয়া বলেন, তিনি রাত ১০টায় ডিউটির জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যান। সকাল ৭টায় বাসায় এসে দেখেন দরজা খোলা, জানালার গ্রীল কাটা। বাসার ভেতরে সবকিছু এলোমেলো। স্ত্রী সন্তান অজ্ঞান অবস্থায় মধ্যে পড়ে আছে। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি’। ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ‘দূর্বৃত্তরা স্প্রে নিক্ষেপ করে পরিবারের লোকজনকে মূহুর্তের মধ্যেই অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর তারা বাসায় ডুকে মালামাল চুরি করছে। অনেকেই সকালে চুরির বিষয়টি অবলোকন করেন। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ ছালেক মিয়া বলেন, ‘পৌর এলাকায় স্প্রে পার্টির তান্ডবে আতংকে আছেন সাধারণ মানুষ। দৃর্বৃত্তরা স্প্রে মেরে শিশু নারী পুরুষকে অজ্ঞান করে নিয়ে যাচ্ছে টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার। ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্চেন বাসা-বাড়ির লোকজন’। হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যেই অভিযান চালিয়ে স্প্রে পার্টির গডফাদার কুখ্যাত ডাকাত আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেবকে র্যাব আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেছে। এদিকে পুলিশও অভিযান চালিয়ে আরো কয়েকজনকে আটক করেছে। বাকীদেরকে আটক করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী’।