বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
HomeUncategorizedলালমাইয়ে সুমনের প্রত্যাবর্তন: দাম্পত্য জুটি ও প্রতারণার গল্পে নতুন মোড়

লালমাইয়ে সুমনের প্রত্যাবর্তন: দাম্পত্য জুটি ও প্রতারণার গল্পে নতুন মোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক :

spot_img

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই বাজারে মো. সুমনের পুনরায় ফিরে আসা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক চরমে। লালমাই থানার বড় ধর্মপুর গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে সুমন একসময়ের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেত্রীত্বের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পাশাপাশি স্ত্রীর সহযোগিতায় আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, সুমন ও তার স্ত্রী সুমনা আক্তারের যৌথ অপরাধ কর্মকাণ্ডের পুনরুত্থান এলাকাকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সুমন দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। তবে তার অপরাধ কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করেন তার স্ত্রী সুমনা আক্তার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সুমন নিজেই তার স্ত্রীকে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়তে উৎসাহ দিতেন এবং সেই সম্পর্কের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা আদায়ের কৌশল বের করতেন।

মাতুয়াইল কবরস্থান রোডের চুনু পট্টি এলাকার বাসিন্দা সুমনা তার তরুণ বয়স থেকেই প্রেমের আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে টাকার উৎসব গড়ে তোলেন। তার এই প্রতারণার কৌশল এতটাই সূক্ষ্ম ছিল যে বহু ব্যক্তি প্রতারিত হয়ে অর্থ খুইয়েছেন।

সুমনার বাবা মো. মাসুদ আকন বরিশালে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেছেন। আর তার মা শাহানুর বেগম বর্তমানে বিদেশে নাচ-গান করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পারিবারিক এই জটিলতার মধ্যে সুমনা তার দুই ভাই ও দুই বোনকে বড় করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের নামে তিনি যে পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন, তা নৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

ধনিয়া কলেজে পড়াশোনার সময় থেকেই সুমনা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। ঢাকার মাতুয়াইলে বসবাসের সময় রানা নামের এক ব্যবসায়ী তরুণের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর কাছে খুব পরিচিত। সুমনা প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে প্রথমে বিশ্বাস অর্জন করতেন। পরে একসময় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে হঠাৎ সম্পর্ক ছিন্ন করতেন এবং গোপনে চলে যেতেন।

বর্তমানে ফজলুল হক মহিলা ডিগ্রি কলেজে অনার্সে পড়ছেন সুমনা। এর মধ্যেও তার পুরনো প্রতারণার কৌশল অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রানার ঘটনা ছাড়াও একাধিক তরুণ এবং ব্যবসায়ীর সঙ্গে এমন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

সুমনা-সুমন দম্পতির কর্মকাণ্ড এলাকাবাসীর কাছে কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই দম্পতি যৌথভাবে একটি সুসংগঠিত অপরাধ চক্র চালাচ্ছেন। সুমনের দাপট এবং সুমনার প্রতারণা লালমাই এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

লালমাইয়ের সাধারণ মানুষ বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো সুরাহা পাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “সুমন এবং তার স্ত্রী সুমনা সমাজের জন্য বিষফোঁড়া। এদের কার্যকলাপ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা নিজেরাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।” আরও একজন ব্যবসায়ী বলেন, “সুমনা শুধু প্রতারক নয়, সে একজন সুসংগঠিত অপরাধী। তার কর্মকাণ্ড পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা আর চুপ করে বসে থাকতে পারি না।”

সুমন-সুমনা দম্পতির কর্মকাণ্ড লালমাই এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। স্থানীয়রা মনে করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তারা দাবি করেছেন, প্রশাসন যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ নিজেরাই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

লালমাইয়ে সুমনের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন অপরাধীর ফেরা নয়, বরং তার সঙ্গে তার স্ত্রীর যৌথ অপরাধচক্রের পুনরুত্থানের শঙ্কা। প্রশাসনের উচিত, দ্রুত এই দম্পতির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ অঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এটি সময়ের দাবি।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here