আগামী সাতই জানুয়ারির নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এরই মধ্যে ভোটের মাঠ থেকে একে একে সরে দাঁড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার দলটির পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে না থাকার ঘোষণা দেন। এর মধ্যদিয়ে সবমিলিয়ে গত তিনদিনে জাতীয় পার্টির ১০ প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেলেন।
মঙ্গলবার টাঙ্গাইল-৭, দিনাজপুর-২ , গাজীপুর-৪ , চুয়াডাঙ্গা-১ ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। গত সোমবার (১ জানুয়ারি) হবিগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। এরআগে গত ৩১ ডিসেম্বর বরিশাল-২, বরিশাল-৫, বরগুনা-১ ও গাজীপুর- ১ আসনের প্রার্থীরাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা।
নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের শুরুতে প্রার্থীদের দল থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। এজন্য তারা মাঠে নেমেছিলেন। শুরুতে নিজেদের টাকা খরচ করে অনেক প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার ও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থীরা এখন দলের প্রতিশ্রুত আর্থিক সাপোর্ট পাচ্ছেন না। যার ফলে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
আবার অনেকে মান-সম্মান ও চাপের কারণে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালেও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এছাড়া, এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকেও প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই। কেন্দ্রের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেই প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। বর্তমানে দলটির কতজন প্রার্থী মাঠে আছে, তার সঠিক হিসাবও কেন্দ্রের কাছে নেই!
চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে সরে যাওয়া জাপার প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন অভিযোগ করেছেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এমনকি দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে ফোন দিলে তারা ফোনও ধরছেন না।
তিনি বলেন, ‘গত বুধবার থেকে আমি নির্বাচনী সব প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত আছি। কেননা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের টাকার পাল্লার কাছে নির্বাচন করার মতো আমার অবস্থা নেই। এ ছাড়া দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। ফোন দিলেও তারা ধরেন না। কেন্দ্রে যারা আছেন তারা কেউ সহযোগিতা করছেন না। সারা বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির ৩৮৩ জনের মধ্যে সরকারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ২৬ জনকে উনারা আসন দিয়েছেন। আমাদেরকে সকল দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের জানিয়েছেন, যারা দলকে না জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছে তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।
গত ২২শে নভেম্বর আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। পরে ১৭ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এসব আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এ পর্যন্ত যে প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সবাই জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া ওই ২৬টি আসনের বাইরের আসনগুলোর প্রার্থী। কিন্তু ওই ‘ছেড়ে দেয়া’ আসনগুলো থেকে এখনো কেউ সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেননি।