প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষার প্রতিও সচেতনতা প্রয়োজন।মানুষের জীবনের প্রথম পাঠশালা পরিবার। শিশু যখন নিজ থেকেই হাত-পা নাড়তে শেখে, তখন থেকেই মূলত সে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে শিখতে শুরু করে। আর তখন থেকেই তার সামনে বাবা-মা তথা বড়দের কথাবার্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
বাড়ন্ত শিশুকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভালো-মন্দ বিষয়ে অবহিত করতে হয়। তার সঙ্গে নরম সুরে, মার্জিত আচরণে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করতে হয়। কোনো অবস্থায়ই শিশুকে গালমন্দ করা যাবে না। কারণ শিশুর মনমানসিকতা থাকে খুবই কোমল, তাই সহজেই যেকোনো বিষয়ে তারা শিখে নিতে পারে।
আমি কবির নেওয়াজ রাজ মনে করি,বড়দের কর্তব্য হলো আদর-স্নেহের মাধ্যমে বুঝিয়ে তাদের যেকোনো বদ অভ্যাস থেকে বিরত রাখা।আমরা মানুষের জন্য তেমন কিছুই করতে পারি না, সম্মান দেয়া ছাড়া। সব মানুষকে সম্মান দেয়া উচিত। এটাই তো আমাদের কাজ হবে। সম্মান না দিয়ে সম্মান পাওয়া যায় না।
একজন মজুরের ছেলের কাছে দিনমজুর বাবা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমরা মানুষকে কথায় কথায় গালি দেই, চড়-থাপ্পর মারি, দুর্বলতায় আঘাত করি-এসবের চেয়ে গর্হিত কাজ, জঘন্য কাজ, নগন্য কাজ আর একটিও হয় না। কাজ আদায়ের জন্য কি গালাগাল করতে হয়? গুনীজনের মুখে গালি থাকে না। ভালোবেসেই জয় করা যায় বিশ্ব।
যে কাজ গালি দিয়ে আদায় করতে হয় সে কাজ মানব কল্যাণের জন্য দরকার নাই। গালি যার উদ্দেশ্য দেয়া হয়, অসম্মান যাকে করা হয় এসব তার জাত চেনায় না বরং যে অসম্মান করে, যে মুখ খারাপ করে তার নীচতা জানান দেয়! কথাই যে মানুষের জ্ঞানের মাপকাঠি! আচরণ পরিবারিক শিক্ষার প্রকাশ!
আমি কী এবং কে-সেটা আমার কথা, কাজ এবং আচরণের দ্বারা আমাকেই প্রমাণ করতে হবে।সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই’-এটাই চিরন্তন সত্য। ক্ষণিকের জন্য পেশা-মর্যাদায় ভিন্নতর অবস্থানে থাকি, ভিন্ন কাজ করি, আলাদা কথা বলি কিন্তু দিনের শেষে আমরা মানুষ ছাড়া আর কিছুই না।
আমি কি খুব উচ্চ কেউ? আরও উচ্চতরের চোখে, উচ্চতরেরও উচ্চতরের চোখে, সর্বোপরি স্রষ্টার চোখে আমি কে? ধূলিকণা! ছদরুদ্দী-বদরুদ্দী! কাজেই হিংসা-দেমাগের কিছু নাই। অধীনদের ছাড়া একটি কাজও সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। একজন কৃষককে কতোভাবে অপমান করা হয়! অথচ এক সিজন যদি লাঙ্গল তুলে রাখেন, শ্রম বন্ধ রাখে আপনার-আমার কী হাল হবে তা একবারও ভেবেছি? জীবনে বড্ড বেহাল নেমে আসবে।
সিনিয়র-জুনিয়র ভেদ ভুলে গিয়ে কাউকে হেয় করা শোভনীয় নয়। মনে রাখা দরকার, সমপর্যায়ের কিংবা উচ্চশ্রেণির কেউ আপনাকে সেভাবে সম্মান করবে না, ভালোবাসায় রাখে না, যতোখানি পেতে পারেন আপনার হেল্পিংহ্যান্ডগুলো থেকে। সেটা অর্জন করতে হবে। আমাদের অনুপস্থিতেও যেনো বলে, অমুকে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। যদি এটা অর্জন করা যায় তবে এই একজীবনে আর বেশিকিছু দরকার নাই! নিজেকে তখন ভালো মানুষ ভাবতে পারেন।
পিতামাতা সন্তানের সামনে যেমন আচরণ করবে, তেমন আচরণ শিখবে সেই সন্তান। আপনি যদি আপনার সন্তানের সামনে বৃদ্ধ পিতামাতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, তা হলে বড় হয়ে সেই সন্তান আপনার সঙ্গে অসৎ আচরণ করবে,এটাই সত্য।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস”রাস্ট্রবিজ্ঞান,সিসি”জার্নালিজম,এলএলবি।