বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
Homeলীডশিশুকে উদ্ধারে টেনে বের করার সময় ছিঁড়ে গেছে অনেকের হাত–পা

শিশুকে উদ্ধারে টেনে বের করার সময় ছিঁড়ে গেছে অনেকের হাত–পা

spot_img

প্রতিনিধে: মোঃ সাইদুর রহমান অনিক
উলটে যাওয়া ট্রেনের বগির নিচে চাপা পড়ে আছে মানুষ। কেউ কেউ মৃত আবার কারও দেহে প্রাণ আছে। অনেকের ক্ষতস্থান দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। চাপা পড়া অনেককেই উদ্ধার কর্মীদের প্রতি আকুতি জানাচ্ছেন বাঁচার জন্য। বগির নিচে আটকা পড়া অনেকেই হাত ও পা ধরে টেনে বের করার সময় তাদের হাত–পা ছিঁড়ে এসেছে!

সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ভৈরব জংশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ও আহতের অবস্থা এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীরা।

দুর্ঘটনার ২০ মিনিট পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান অটোচালক শাকিব মিয়া। তিনি স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘আমি এসে দেখি ট্রেনের নিচে চাপা পড়া মানুষদের অনেকেই টেনে বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আটকা পড়া যার হাত ধরে টান দিচ্ছিল তার হাতটা খুলে আসতেছিল। আবার পা ধরে টান দিলে পা’টা শরীর থেকে খুলে আসছিল। এক মাকে দেখলাম তার আনুমানিক ৫ বছরের এক সন্তানকে উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন। তার সন্তানকে যখন উদ্ধার করা হলো তখন তিনি ট্রেনের নিচে চাপা অবস্থাতেই মারা গেলেন। খুব মর্মান্তিক, খুউব…এগুলো চোখে দেখার মতো না!’

দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই বাড়ি রোকন মোহাম্মদের। সংঘর্ষের বিকট শব্দ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে এসে দেখেন, মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে ৷ মারাত্মক আহত অনেকেই জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। ভৈরবের স্থানীয় ভাষায় তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ট্রেনের নিচে চাপা অনেককেই দেখেছি হাত নেই, পা নেই। অনেকেই এমন ছিল যাদের কোমর থেকে পা এবং বুক থেকে মাথা নেই। শুধু বুকটা পড়ে আছে লাইনের ধারে।

এই ঘটনায় সোমবার রাত ১০ পর্যন্ত ২৫ জনের লাশ উদ্ধার এবং প্রায় ৮০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহতদের ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার মো. শোয়েব রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের এখানে ২৫ টি মরদেহ এসেছে। এর মধ্যে ৮টি মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। মোট ৮০ জনের মতো আহত অবস্থায় এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ২০ জন বেশি গুরুতর হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার হয়েছে। অনেকেই স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত (রাত ১০ টা) আমাদের হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন।’

তবে ফায়ার সার্ভিস ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রাত ১০টায় ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে তিনটি বগি পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। একটি পুরোটাই উলটানো এবং অন্যটি দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়ানো বগিটির জানালার কাচ ভাঙা এবং অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। দুর্ঘটনাস্থলে ছোপ ছোপ রক্ত, মাথার মগজ, হাতের আঙুলসহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা গেছে।

উলটে থাকা বগি উদ্ধারের জন্য বড় ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাজে সহায়তা করছে বিজিবি, আনসার, পুলিশ, র‍্যাব। তবে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ কয়েক দফায় ব্যাহত হয়েছে।

রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজ আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছেন পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তবে শেষ বগি উত্তোলন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট অবস্থান করবে।’

ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলিম হোসেন শিকদার বলেন, ‘ঢাকা থেকে একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ভৈরব স্টেশনে ঢুকছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারসিন্দুর ট্রেনটি ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল। জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় এগারসিন্দুর ট্রেনের শেষের দুই–তিনটি বগিতে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। মূলত সিগন্যালের কোনো জটিলতার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল রাত ১০টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। বর্তমানে শুধু আপ লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here