আনিছ মাহমুদ লিমন :
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় ট্রেন ছুটবে আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর)। ৮২ কিলোমিটার এ রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে করে ফরিদপুর যাবেন এবং দুপুর ২টায় ভাঙ্গা উপজেলার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন।
এদিকে এ ট্রেন চালুর খবরে আনন্দে উদ্বেল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসী। এর মধ্য দিয়ে ট্রেনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের পদ্মা সেতু পার হওয়ার অপেক্ষার অবসান ঘটবে। ভাঙ্গাবাসী বলছেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর এবার ট্রেন নিয়ে নতুন পরিকল্পনার স্বপ্ন দেখছে। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথে বাড়ী যাবেন। রেল ভ্রমণ সবসময়ই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। শুধু যাত্রী নন, পণ্য পরিবহনেও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকবেন রেলপথে। এতে বাঁচবে অর্থ ও সময়। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিসর। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এ রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তিনটি ট্রেন চলাচল করতে পারে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করে। তবে ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের বাস্তব দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেণ্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের কমিটি। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট বা ঢাকা-রাজশাহী পথের তুলনায় ঢাকা-ভাঙ্গা পথে যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। আন্তঃনগর তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ারে বসে (নন-এসি) ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে ভাড়া লাগে ৩৪৫ টাকা। এসি চেয়ারে ভাড়া ৬৫৬ টাকা। এ পথের দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। এ গন্তব্যে যেতে আন্তঃনগর ট্রেনে (নন-এসি) ভাড়া গুনতে হতে পারে ৩৫০ টাকা। এসি চেয়ারে গেলে ৬৬৭ টাকা।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলপথটি তিনটি অংশে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গেণ্ডারিয়া-মাওয়া অংশ (৩৭ কিলোমিটার), মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ (৪২ কিলোমিটার) এবং ভাঙ্গা জংশন-যশোর অংশ (৮৭ কিলোমিটার)। এর মধ্যে ঢাকা ও গেণ্ডারিয়ার মধ্যে ৩ কিলোমিটারের একটি সংযোগও নির্মিত হচ্ছে। রেলপথে প্রায় ৪৩.২ কিলোমিটার লুপ, সাইডিং এবং ওয়াই-কানেকশনও রয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো রেলপথটির দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২১৫.২ কিলোমিটারে।
এদিকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কথা হলে ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র আইয়ুব আলী বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নপূরণ করেছে। জীবনযাত্রার মানসহ নানা দিক দিয়ে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এলাকার কৃষক আবু বকর ছিদ্দিক জানান, রেলপথ চালু হলে আমরা কাঁচামাল বেশি দামে বিক্রি করতে পারব। এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চল তথা ফরিদপুরের মানুষ। তবে সড়কপথে বাসে ঢাকায় যেতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া লাগে। সেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় নিরাপদে ঢাকায় যাওয়া যাবে। এটি সব শ্রেণির যাত্রীর ক্ষেত্রেই বড় প্রভাব ফেলবে। সর্বস্তরের মানুষ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ সুবিধার পাশাপাশি সবক্ষেত্রে লাভবান হবে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সবক্ষেত্রে জীবনমানের পরিবর্তন হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের একটি নয়, কয়েকটি স্বপ্নপূরণ হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবরে এলাকাবাসী আনন্দিত। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরুর পর এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তন হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসভার নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। এলাকার উন্নয়ন হবে যেমন, তেমনি যাতায়াতের ভোগান্তির পাশাপাশি কমবে শিক্ষার খরচ। জিনিসপত্রের দামেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। ভাঙ্গা থানা ওসি মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। যেকোনো বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।