যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন মেডিকেল অফিসার, একজন নারী উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এবং একজন সেচ্ছাসেবীকে এক রোগীর পিতা কর্তৃক শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবাদানকারীরা।
মঙ্গলবার ৩০ জানুয়ারি সকাল থেকে ‘নিরাপদ কর্মস্থলের’ দাবিতে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কর্মবিরতি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকে মানববন্ধন করেন তারা। এসময় শুধুমাত্র হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু রাখা হয়। মানববন্ধনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি, ডা. সুরাইয়া পারভিন, ডা. আকিব হোসেন,ডা.চন্দনা পাল ডা. ইয়াসির আরাফাতসহ হাসপাতালে কর্মরত সকল চিকিৎসক, পুরুষ ও নারী সেবাদানকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে ‘নিরাপদ কর্মস্থলে’র দাবি করে চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের উপর হামলাকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস হাসপাতালে এসে চিকিৎসক ও অন্য সেবাদানকারীদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সুষ্ঠ ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলে চিকিৎসক ও সেবাদানকারীরা মানববন্ধন শেষ করে সেবাদান কার্যক্রম শুরু করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার বলেন, সোমবার রাত ৯টার দিকে একজন শিশুরোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সময় জরুরি বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আশরাফুন্নাহারকে থাপ্পড় মারেন ওই রোগীর পিতা। স্বেচ্ছাসেবি মোঃ ফাহিমকেও মারপিট করেন তিনি। এসময় জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. বিএম শামসুজ্জামান সোহাগ পরিস্থিতি শান্ত করতে আসলে তার বুকে লাথি মারে এবং একটি বাইসাইকেল ছুড়ে মারেন ওই ব্যক্তি।
এসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ হুমকি দিয়ে চলে যায় তিনি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই। আমরা চাই আমাদের কর্মস্থল নিরাপদ হোক। ডা. লৎফুন্নাহার আরও বলেন, ‘এঘটনায় রাতেই চৌগাছা থানায় জানানো হয়। পরে সকালে চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবাদানকারীরা কর্মবিরতি করে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে সিভিল সার্জন স্যার এসে অনুরোধ করায় সেবাদানকারীরা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ডা. শামসুজ্জামান সোহাগ মঙ্গলবার চৌগাছা থানায় মামলা করেছেন।’
ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, এরইমধ্যে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা কয়েকবার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং কর্মস্থলকে নিরাপদ করা হবে বলে আস্বস্থ্য করেছেন। যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ^াস বলেন, এ ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত। আমার কোন স্বাস্থ্যকর্মী কোন অন্যায় করে থাকলে তাদের আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতাম। তবে কোন সরকারি কর্মচারির গায়ে হাত তোলার অধিকার কারও নেই।
এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। উনারা কর্মবিরতি ও মানবন্ধন করছিলেন। আমরা আস্বস্ত করায় কোন সাধারণ মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হন এজন্য তারা কর্মস্থলে ফিরে গেছেন।’ চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী মামলার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’