বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম বলা হয় গুজরাটের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ করা হয়েছে, এই স্টেডিয়ামেই গত ৫ অক্টোবর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রানার্সআপ নিউজিল্যন্ডের ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল আইসিসি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট। ভারতবর্ষে আরও ৯টি শহর ঘুরে প্রায় দেড় মাসের লং জার্নি শেষে আজ স্বাগতিক ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে এক লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আজ বিশ্বকাপের পরিসমাপ্তি হবে।
এরই মধ্যে টুর্নামেন্টের শেষটা বর্ণিল করতে ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে, মাঝে ও শেষে জমকালো নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে স্বাগতিক দেশ ভারত। এবার বিশ্বকাপের কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন হয়নি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কিছু আয়োজন ছিল। এবার ফাইনালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। টুর্নামেন্টের শেষটা সফল করতে যেমন আয়োজনের কমতি নেই, তেমনি লাখো দর্শকের সামনে উৎসবমুখর পরিবেশে খেলে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে তুলির শেষ আঁচড়টি দিতে চান রোহিত শর্মারা। ফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া হলেও শিরোপা জয়ের এক ও অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবেন তারা।
এবারের টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে ভারত। একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে ফাইনালে উঠেছে তারা। প্রাথমিক পর্বের ৯টি ম্যাচ ও সেমিফাইনালে দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে টিম ইন্ডিয়া। প্রতিম্যাচেই যেন দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে দলটি। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং কোনো দিকেই দলটির দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়নি। জয়ের যে ধারায় রয়েছে, সে অনুযায়ী আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরিষ্কার ফেভারিট ভারত। অনেকের মতে, এই ভারত দলকে কোনোভাবেই দমানো যাবে না। তবে এটিও মাথায় রাখা উচিত বড় ম্যাচে অর্থাৎ ফাইনালে কীভাবে খেলতে হয়, সে ব্যাপারে ডক্টরেট করা দল অস্ট্রেলিয়া! লিগপর্বের নিজেদের সূচনা ম্যাচে ভারতের কাছে হারলেও অজিরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স বলে অতটা বুঝা যায়নি। এবার ফাইনালে রুদ্ররূপ দেখা যেতে পারে তাদের। ভারত টানা ১০ ম্যাচে জয় নিয়ে ফাইনালে এলেও টানা ৮ ম্যাচে অপরাজিত অস্ট্রেলিয়া। তাদেরও ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব দিক থেকেই পরীক্ষিত দলটি। ধারণা করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে বিশ্বকাপ ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নানা কারণে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরের তুলতে পারে ভারত। প্রথমত দলটি খুবই ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও উজ্জীবিত। তাদের যে টিম স্পিরিড, সেটি ভারতকে অনেক এগিয়ে রাখবে। দ্বিতীয়ত রোহিত শর্মার মতো একজন দক্ষ ও দূরদর্শী অধিনায়ক রয়েছেন। সতীর্থদের কাছ থেকে কীভাবে পারফরম্যান্স বের করে নিতে হয়, তা বেশ ভালো করেই জানেন রোহিত। নিজেও নিঃস্বার্থভাবে ব্যাট চালান। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এ ছাড়া খেলার পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে খেলতে হবে, কখন, কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা রোহিতের মতো কাউকে দেখা যায় না। তৃতীয়ত নিজেদের হোম কন্ডিশন। এখানে কীভাবে খেলতে হবে, উইকেটের আচরণ কেমন হবে, কী কৌশল ও পরিকল্পনা আগাতে হবে, তা ভারতীয় ক্রিকেটারদের খুবই ভালো করে জানা। চতুর্থত বিরাট কোহলির মতো বিশ্বমানের কৌশলী একজন ব্যাটার দলে রয়েছেন। তার অসাধারণ ব্যাটিং দক্ষতায় দল এগিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চমত মোহাম্মদ শামির মতো একজন বোলার আছেন। যিনি কিনা একাই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারেন। ষষ্ঠত ভারত স্পিন শক্তিতে অনেক এগিয়ে। স্পিনাররা বেকায়দা ফেলতে পারেন অজি ব্যাটারদের। স্পিনেই ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারে ভারত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গত ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বাগতিক দেশ বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রেখেছে। এবার ভারতও শিরোপা ধরে রাখতে পারে, সেটি বলাই যায়। অন্যদিকে ভারতের চেয়ে বেশ কিছু জায়গায় এগিয়ে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচেই ভারতের লোয়ার অর্ডারকে পরীক্ষা দিতে হয়নি। যেখানে অভিজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। এ ছাড়া গ্নেন ম্যাক্সওয়েলের মতো একজন অভিজ্ঞ বিস্ফোরক অলরাউন্ডার রয়েছে। প্রাথমিক পর্বের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ম্যাক্সওয়েল একাই ম্যাচ জেতানো অবিশ্বাস্য ও অতিমানবীয় অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন। অন্যদিকে অজি পেস ইউনিট খুবই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে। সেমিফাইনালে তারা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল। স্পিনেও এগিয়ে তারা। অ্যাডাম জাম্পার মতো একজন উইকেট-টেকার লেগ স্পিনার রয়েছে তাদের। সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ে কোনো অংশেই কম যাবে না অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে আহমেদাবাদের উইকেটও ফাইনাল ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জানা গেছে, এই উইকেটে যেমন রান হয়, তেমনি বোলাররাও সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে টস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। টস জেতা দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ‘বদলা’ নিতে চায় ভারত। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেই বিশ্বকাপ শিরোপা জয় থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন ভারতীয়রা। এবার ঘরের মাঠে সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ এসেছে। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে ৮ ম্যাচ জিতেছেন অজিরা। ৫টি ম্যাচ জিতেছে ভারত। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে তারা। এর মধ্যে দুবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। অন্যদিকে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে পাঁচবার শিরোপা জিতেছে তারা। এবার বিশ্বকাপ ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ শিরোপা জিতবে নাকি তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করবে ভারত সেটিই এখন দেখার বিষয়। বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে।