বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ক্ষেতমজুর সমিতির সাবেক সভাপতি প্রয়াত কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ের সামনে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পার্টির শত শত সদস্য-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সমাবেত হন।
শামছুজ্জামান সেলিম গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসায় মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী শহরের শেরশাহ রোডে। তিনি বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির সভাপতি ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক একতা, দৈনিক সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখতেন।
শুক্রবার বাদ জুমা মোহাম্মদপুর মসজিদে প্রয়াতের প্রথম নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকেলে হিমঘর থেকে তার মরদেহ সিপিবির কেন্দ্রীয় অফিস মুক্তিভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন জেলা-থানা ও শাখা কমিটি, বিভিন্ন দল, গণসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা বক্তব্য রাখেন।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, তরুণ বয়সে শ্রমিকদের সংগঠিত করা শামছুজ্জামান সেলিম পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধে এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী শ্রমিক, ক্ষেতমজুর আন্দোলন ও বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ করেন। জাতি তার অবদান চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, শামছুজ্জামান সেলিমের মৃত্যুতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক সূর্য অস্তমিত হলো। আজীবন বিপ্লবী সেলিম ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আদর্শের প্রতীক। তিনি হাজার হাজার তরুণকে কমিউনিস্ট আদর্শ ও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার দেখানো আদর্শের পথ ধরেই কমিউনিস্ট পার্টি শ্রেণি বিপ্লবী আন্দোলনকে এগিয়ে নেবে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জাতি শামছুজ্জামান সেলিমের মৃত্যুতে একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। যিনি ব্যক্তি-গোষ্ঠী স্বার্থ উপেক্ষা করে মানবমুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমাজতন্ত্র তথা মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নীতিনিষ্ঠ ও অবিচল থেকে প্রতি মুহূর্তে আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।
এরপর বিভিন্ন দল, সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা কমিটি ছাড়াও অন্যান্য গণসংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
শামছুজ্জামান সেলিমের প্রতি আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ক্ষেতমজুর সমিতি, কৃষক সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট, হকার্স ইউনিয়ন, প্রাইভেট কার অ্যান্ড ড্রাইভারস ইউনিয়ন।
আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী আন্দোলন, বাসদ (মার্কসবাদী), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট লীগ, ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনী।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।
এর আগে রায়েরবাজার মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে সেলিমের মরদেহবাহী গাড়ি পল্টনে পৌঁছালে সিপিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা গ্রহণ করে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে পার্টি অফিসে নিয়ে আসে।
শুরুতেই প্রয়াত সেলিমের মরদেহ পার্টির লাল পতাকা দ্বারা আচ্ছাদিত করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও গণসংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মুক্তিভবনে সিপিবির নেতাকর্মীরা সমবেত কণ্ঠে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গেয়ে শামছুজ্জামান সেলিমকে বিদায় জানান। শনিবার (১৯ আগস্ট) প্রয়াতের মরদেহ নিজ বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীতে পৌঁছাবে। সেখানে প্রয়াতের মরদেহের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) প্রদানের পর ঈশ্বরদীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে শামছুজ্জামান সেলিমের দাফন হবে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঈশ্বরদীতে শামছুজ্জামান সেলিমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
দলীয় কার্যালয়ে শামছুজ্জামান সেলিমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শনিবার সারা দেশে শোকদিবস পালনের ঘোষণা দেয় সিপিবি। শোক দিবসে সারা দেশের সিপিবি অফিসগুলোতে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।