অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলে তাহলে উদ্যোগ নেবেন তারা। রোববার (১১ আগস্ট) বিকেল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে করেন এম তৌহিদ হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
মতবিনিময় তৌহিদ হোসেনের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে কি না—জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার বিষয় নয়। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় যদি কখনো আমাদের বলে তাকে (শেখ হাসিনা) দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেন, তাহলে পররাষ্ট্রসচিব হয়তো চিঠি দেবেন।
শেখ হাসিনাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে সবকিছু ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে নয়, আমাদের নিয়ন্ত্রণেও নয়। দেখতে থাকুন কী হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমি যেটুকু জানি সেটুকু আপনাদের বলছি। উপদেষ্টাদের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে। এটুকু তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরে বাকিটুকু আমি বলতে পারব না।
ব্রিফিংয়ে প্রবাসীদের জন্য সেবার মান বাড়ানোর ঘোষণা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, প্রবাসীদের জন্য আরও উন্নত সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হবে। তবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। বিদেশের মিশনে কম অফিসার বলেই অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া হয় না। তবে আমরা চাই, হাসিমুখে যেন সেবা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টিকে রাজনৈতিক হামলা বলে দাবি করেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলছে। এটি যতটা না ধর্মীয় কারণে, তার থেকেও বেশি রাজনৈতিক কারণে। তার মানে এই না যে আমরা রাজনৈতিক কারণেও কোনো সংঘাত প্রশ্রয় দেব। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’
ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সোনালি অধ্যায় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সরকারের মধ্যে সোনালি সম্পর্ক থাকলেও, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা বিস্তৃত ছিল সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা চাই ভারত আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে।’
এ সময় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মানবাধিকার বিষয়ে বিদেশিরা কথা বলতে পেরেছে, কারণ আমরা সে সুযোগ দিয়েছি। মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আর জাতিসংঘও আমাদের জানিয়েছে তারা যে কোনো ধরনের সহায়তা করবে।’
এসময় নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার সরে যাবে বলেও জানায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি আরো বলেন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে চূড়ান্তভাবে একটি নিরপেক্ষ এবং সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এটা নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। সেটি সাত দিন লাগতে পারে, ১৫ দিন লাগতে পারে, আবার দুই মাসও লাগতে পারে।
নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন করতে হবে অবশ্যই। নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার সরে যাবে। কিন্তু আমরা এখনই বলতে পারছি না, ঠিক কতদিন লাগবে। এটা নিয়ে আপাতত কোনো স্পেকুলেট না করি। আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করি। এই পরিস্থিতি আসুক দেশের।