সোমবার, মে ২০, ২০২৪
Homeঅর্থনীতিযশোরের ফুল চাষিরা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত

যশোরের ফুল চাষিরা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত

spot_img

ফুল ওদের ধ্যান জ্ঞান সেথা আছে অর্থ
প্লাস্টিক ফুলে কপাল পুড়ছে হচ্ছে গর্ত
রপ্তানী আশাপ্রদ নয়রে সেথা হরেক শর্ত
এসব মেনে যশোরের ফুলচাষীর জীবনবাজী
এমন অনেক আছে ফুল ক্রয় টাকায় গররাজি
বারবার আদায়ে দফায় দফায় তাই বসেন কাজী
খুব ভোরে মাঠে যায় শীত বর্ষা সাঙ্গ করে ওরা
সফল কৃষক গণ্য তবে নয় জীবন স্বর্ণে মোড়া
সুখবর কেউ কেউ এগিয়ে আসে টাকার তোড়া
শীতকাল ফুলের মৌসুৃম তাই চলে পরিশ্রম হরদম
প্রেম প্রীতি ফুল ছাড়া অচল, উপহার হোক না কম
ফুলচাষী মাঠ পরিচর্যায় ব্যস্ত নেই ফুরসৎ ফেলে দম!

ফুলের ‘রাজধানী খ্যাত’ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি পানিসারায় গাছ ও ফুলের নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে চাষিরা ফুলের বাজার ধরতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এই মৌসুমে চাষিরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

গত বছর মৌসুমে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ।
ফুলক্ষেতের পাশাপাশি গদখালিতে গড়ে ওঠা বিনোদনকেন্দ্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিও চোখে পড়ার মতো। চলতি মৌসুমে ব্যবসায় সফল হবে এমন স্বপ্ন দেখছেন ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির চাষিরা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় লাভ বেশি হবে এই আশায় বুক বাঁধছেন তারা। তবে একই সময় নির্বাচনের মৌসুম হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কাও রয়েছে তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে সাত হাজার কৃষক ফুল চাষের সাথে জড়িত।
দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস থেকে ফুলের চাহিদা ও বিক্রি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একইসাথে বাড়তে থাকে ফুলের দামও।
% প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস,
% ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস,
% ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন,
% থার্টিফাস্ট নাইট, ইংরেজি নববর্ষ,
% ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব,
% ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও
% ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস
এসব সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে মোটা অংকের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে গদখালির ফুলচাষিদের। চলতি বছরে ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দেড় দুই কোটি টাকা।
যশোরের গদখালি ফুলের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এই বাজারে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪-৫ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতিপিস ৩-৪ টাকা, গাদাফুল প্রতি হাজার ৪০০-৫০০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতিপিস ৩-৪ টাকা, ঝাউ প্রতিপিস মানভেদে ৫০-১০০ টাকা, জারবেরা প্রতিপিস ১০-১২ টাকা। ভালো দামে ফুল বিক্রি করে সন্তুষ্ট চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

গদখালি থেকে পানিসারা ফুল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন বাগান, ফুলের সেড ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন দিবসগুলোকে উদ্দেশ্য করে ফুলের বাজার ধরতে বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্তসময় পার করছেন চাষি এবং কর্মচারীরা।

পানিসারা এলাকার ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, এ বছর চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ আর গাদা ফুলের চাষ করেছি। চাষের পরিমাণ কম হলেও এ বছর মোটামুটি ভালো দাম পেয়েছি। তবে হরতাল-অবরোধে দ্বিগুণ গাড়িভাড়া দিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করতে হচ্ছে। তিনি দশ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল ও চারা চাষ করেছেন।

ফুলচাষি সাইফুল ইসলাম এ বছর ১ বিঘা জমিতে জারবেরা, রজনীগন্ধার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমরা ভালো দাম পাচ্ছি। সেটা বজায় থাকলে ও দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না হলে অনুষ্ঠান বা দিবসগুলোতে ভালো লাভ হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর নানা কারণে চাষিরা দাম পায় না। এজন্য চলতি বছর সব চাষি স্বল্প পরিমাণে ফুলের চাষ করেছে। বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে।

এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন,বাজারে গোলাপ প্রতিপিস ৪-৫ টাকায় বিক্রি করেছি। ১৬ ডিসেম্বরের আগে দাম আরও বাড়বে। এজন্য এখন গাছের যত্নের দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
ফুলচাষি নেতৃবৃন্দ বলছেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলতি বছর গদখালির ফুলচাষিরা রেকর্ড পরিমাণ অংকের ফুল বাজারজাত করতে পারবে।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাইরের জেলাগুলোতে ফুল বিপণনে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা আশাবাদী দেশ স্বাভাবিক হবে এবং ফুলচাষিরা তাদের ফুল সুন্দরভাবে বাজারজাত করে লাভবান হতে পারবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, যশোরের গদখালি এলাকায় প্রায় সাড়ে ৬00 হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। প্রায় সাত হাজার কৃষক এই ফুলচাষের সাথে জড়িত। গত মৌসুমে এই এলাকা থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুলের বেচাকেনা হয়েছে। এ বছর প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here