বুধবার, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
Homeঅর্থনীতিব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর কাছে বন্দী সরকার অসহায় হয়ে পড়েছে ক্রেতারা

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর কাছে বন্দী সরকার অসহায় হয়ে পড়েছে ক্রেতারা

spot_img

লাগামহীনভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। গত বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হলেও বাজারে এর তেমন প্রভাব নেই। সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু, ডিম ও পেঁয়াজ। নানা অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি মূল্যে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন এসব পণ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সরকারকে কঠোরভাবে এদের দমন করতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। মাঝেমধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যবসায়ীরা জরিমানা করা হলে পরে আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে তিনটি পণ্য ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয় সরকার।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো পণ্য তিনটির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা আর ডিমের পিস সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জরুরি এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকা, ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা। সরকারের ঘোষণার আগেও এই দামে বিক্রি হয়েছিল এসব পণ্য।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম ঘোষণা করলেও পাইকারি বাজারে সেই দামে কিনতে পারছেন না তারা।

রাজধানীর মুগদা এলাকায় খুচরা ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে আগে যে দাম ছিল এখনও সেই দামই আছে। আমরা কমে কিনতে পারলে তো বিক্রি করতে সমস্যা নাই। প্রতি কেজি আলুতে চার টাকা লাভ করতে পারলেই আমাদের আর লাগে না। কিন্তু সেটাও তো পারছি না।

একই এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দাম বেশি হওয়ায় আমাদের কাস্টমারও কমে গেছে। যেই লোক আগে আলু কিনত দুই কেজি, সে এখন এক কেজি কিনে। আগে প্রতিদিন দুই বস্তা আলু বেচতাম। এখন এক বস্তাই বিক্রি হয় না। আবার লাভও কম হচ্ছে। সরকার যেই জায়গায় ধরার দরকার সেই জায়গায় ধরলেই তো হয়।

ডিমের বাজারেও সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামের প্রভাব নেই। বেঁধে দেওয়া দামে ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও অধিকাংশ দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে।

মুগদা এলাকার মুদি দোকানদার মিঠু বলেন, ডিমে তো লাভ হয় না। এক খাঁচা ডিম বিক্রি কইরা ২০-৩০ টাকাও লাভ করতে পারি না। রাখছি শুধু কাস্টমার ধরার লাইগা।

৭৫ টাকার নিচে নেই দেশি পেঁয়াজ। তবে সবচেয়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। কিছু আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতাদেরও একই কথা। আড়তে দাম কমেনি। তাই তারা নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার তো সব কিছু বিবেচনা করে হিসাব নিকাশ করেই এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখন নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে স্বাভাবিক মুনাফা হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তো স্বাভাবিক লাভে আগ্রহী না। বেশি লাভ করতে চায়। এখন ব্যবসায়ীদের এই প্রবণতা যদি বন্ধ না হয়, তবে যেখানে থেকে উৎপাদন হয় অথবা যেখান থেকে পণ্য ছাড় হয় সেখানে মূল্যটা প্রথম ঠিক করতে হবে। সাপ্লাই চেইন যদি ঠিক রাখা যায়, তবে পাইকারে খুচরা পর্যায়ে একটু তত্ত্বাবধায়ন করলেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে। কড়াভাবে বলছে, শুধু বললেই হবে না। কড়াভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাজার শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই দেখতেছেন আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ডিজি স্যার নিজেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযানে যাচ্ছেন, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আমরা নিয়মিত আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই 

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here