সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
HomeUncategorizedপাইকগাছায় মৎস্য ঘেরের লবণাক্ত জমিতে সরিষার আবাদ করে সফল কৃষক হারুন গাজী

পাইকগাছায় মৎস্য ঘেরের লবণাক্ত জমিতে সরিষার আবাদ করে সফল কৃষক হারুন গাজী

spot_img

তৃপ্তি রঞ্জন সেন পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :
খুলনার পাইকগাছায় মৎস্য লীজ ঘেরে বিনা চাষের সরিষার আবাদ করে সফল হয়েছেন এক কৃষক। তার এই সাফল্যে এখন অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দেশের খাদ্য শষ্যের মধ্যে সরিষা অন্যতম ফসল। আর ভোজ্য তেলা ছাড়া তো কিছুই হয় না।

সাধারনত সরিষার চাষ হয় উর্বর, উচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে। কিন্তু পাইকগাছার কৃষক হারুণ গাজী লবাণাক্ত জমিতে সরিষার চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চারিদিকে শুধু হলুদের সমারোহ আর সেখানে রয়েছে মৌ মৌ গন্ধ। হলুদ প্রকৃতির এমন অপরুপ সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদের তীরে। এটি মূলত একটি মৎস্য লীজ ঘের, বছরের পর বছর ধরে এখানে মাছ চাষ হয়ে আসছে। বছরের প্রায় ৯ মাসই লবণ পানিতে তলিয়ে থাকে চিংড়ী ঘেরটি। মাছ আহরণের পর ২ থেকে ৩ মাস পতিত হয়ে পড়ে থাকে চিংড়ী ঘেরের জমি। কিন্তু এ বছর বদলে গিয়েছে এমন দৃশ্য। ৮০ বিঘা আয়তনের পুরো ঘের জুড়ে রয়েছে সরিষা।

কোন প্রকারের পুর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই পাইকগাছা উপজেলার মালথ গ্রামের মৃত শাহজদ্দীন গাজীর ছেলে কৃষক গাজী হারুন-অর রশিদ গদাইপুর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের তীরে হিতামপুর মৌজায় ৮০ বিঘা মৎস্য ঘেরের লবণাক্ত জমিতে বিনা চাষে বিনা-৯ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। হারুন অর রশিদ এ প্রতিনিধিকে বলেন, সরিষা চাষের ব্যাপারে আমার কোন পুর্ব অভিজ্ঞাতা নেই। গত বছর ঘেরের শুকিয়ে যাওয়া জমিতে একটি সরিষার গাছ বেড়ে উঠে। বড় হয়ে সেটি ঝাঁকালো হয়। তখনই তার মাথায় আসে সরিষা চাষের চিন্তা ভাবনা। প্রথম বছরেই ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষক হারুন অর রশিদ গাজী।

বর্তমানে তার সমস্ত ক্ষেত হলুদ সরিষা ফুলে ভরে গেছে, কিছু কিছু গাছে ফলও ধরেছে। শীতের উষ্ণু হিম শীতল বাতাসে সরিষা ফুল দুলছে আর মৌমাছি গুন গুন করে গান করার মধ্য দিয়ে মধু আহরণ করছে এমন দৃশ্য মুগ্ধ করছে প্রকৃতি প্রেমী মানুষকে। অনেকেই পরিবার পরিজন, অনেকেই আবার প্রিয়জনকে নিয়ে যাচ্ছেন হলুদের সমারোহ দেখতে, সরিষা ক্ষেতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, এসব ছবি পরবর্তীতে বিভিন্ন ছন্দ আর উপমা দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

এদিকে লবণাক্ত জমিতে সরিষার ভালো ফলন হওয়ায় শুধু কৃষক হারুন গাজীর সফলতা দেখছেন না কৃষি বিভাগ। কৃষক হারুনের এ সফলতাকে লবণ অধ্যুষিত উপকূলীয় এ অঞ্চলে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের অনেক সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। কৃষক হারুনের এ সফলতা দেখে অনেক মৎস্য চাষীরা সরিষা আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন বলে কৃষক হারুন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর যাবৎ কপোতাক্ষ নদের তীরে হিতামপুর মৌজায় ৮০ বিঘা জমিতে মৎস্য লিজ ঘের করে আসছি। অক্টোবর নভেম্বরের দিকে মাছ আহরণের পর চিংড়ি ঘেরের জমি ২ থেকে ৩ মাস পতিত পড়ে থাকে। এ জন্য অনেকের পরামর্শ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৭০ বিঘা জমিতে বিনা-৯ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। এখানে আমার কোন চাষ করা লাগেনি। ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।

সম্পূর্ণ বিনা চাষে আবাদ করায় মাছ চাষের সাথে বাড়তি আয় হিসেবে অনেক লাভ হবে বলে ধারণা করছি। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন সহ কৃষি বিভাগ থেকে সরিষার মাঠটি পরিদর্শন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসীম কুমার দাশ বলেন, দেশের মোট চাহিদার ৯০ ভাগ তেল আমদানী করতে হয়। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা আমদানী খাতে চলে যায়। আমদানী নির্ভরতা কমাতে বর্তমান সরকার এবং কৃষি বিভাগ তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ লক্ষে কৃষি প্রনোদনা সহ কৃষককে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অত্র উপজেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে লবণাক্ত জমিতে বিনা চাষের সরিষা আবাদ, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

আশা করছি কৃষক হারুন গাজীকে অনুসরণ করে অন্যান্য মৎস্য চাষীরাও তাদের চিংড়ি ঘেরে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করতে এগিয়ে আসবেন। বিনা চাষে সরিষা ফসল উৎপাদনের যে সম্ভবনা তৈরী হয়েছে এটি কাজে লাগাতে পারলে এলাকার কৃষকরা অনেক লাভবান হবে বলে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here