মোঃ ইসমাইল হোসেন শাকিল, ময়মনসিংহ:
‘বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এমন একটি সাধারণ বাক্য প্রায় দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। বাকীখোরদের কাছ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণত এমন কাজ করে থাকেন দোকানীরা। তবে এমন ম্যাসেজ দেখে বাকীখোরদের থামানো না গেলেও নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা অসস্তিতে ভোগেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন৷ আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছুটা ধার দেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভুক্ত থাকতে হয় তাদের।
সাধারণ দোকানদাররা বাকীতে পণ্য দিতে না চাইলেও এবার ঠিক উলটো কাজটি করতে যাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গরীব ও দুঃস্থদের বাকীতে পণ্য দিতে এবার তারা আয়োজন করেছে ‘বাকীর হাট’।
আজ ময়মনসিংহে আয়োজিত দিন ব্যাপী এই কর্মসূচীতে প্রায় ২৫০ পরিবার বাকীতে পণ্য কেনার সুযোগ পায়। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, লবণ, শাকসবজি, মাছ, মুরগী, বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ, কাপড় সহ প্রায় ২৬ টি আইটেম নিয়ে বসেছে এই বাকীর হাট।
বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এই স্লোগানের পরিবর্তে ‘বাকী চাহিয়া লজ্জা পাবেন না’ এই স্লোগানটি তারা প্রমোট করছেন হত দরিদ্র মানুষের জন্য। এই পরিবারগুলোর আজকে টাকা নেই, কিন্তু একদিন তাদের টাকা হবে। সেদিন তারা এই টাকা পরিশোধ করবে। তবে বিদ্যানন্দকে নয়, সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে অন্য কোন অভাবীকে। এমন একটি শর্ত দিয়েই ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বাজার শেষে প্রতিটি ক্রেতার নাম ও বাকীর পরিমাণ লিখে একটি আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা যা দিয়ে প্রতীকীভাবে এই বাকীর কথা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সেবামূলক কাজের পেছনে একটি বার্তা থাকে। বাকীর হাটের মাধ্যমে তারা সমাজের মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে সাহায্য করে৷ এমনই একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। একই সাথে সাহায্য চাওয়া কোন লজ্জার বিষয় না। বরং সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা মানবিক একটি দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের কথাই বিদ্যানন্দ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এমন উদ্যোগের মাধ্যমে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) ময়মনসিংহ জেলার S.R. কমিউনিটি সেন্টারে বাকীর হাটে পণ্য কেনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জনাব মাহফুজুল আলম মাসুম । এ সময়ে বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যানন্দের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরিপের মাধ্যমে অভাবী পরিবার চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কার্ড প্রদান করে। সে কার্ড দেখিয়ে পরিবারগুলো ‘বাকীর হাট’ থেকে কেনাকাটার সুযোগ পায়।
দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কতৃক জাতীয় মানবকল্যান পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।