গত আগষ্টের শেষের দিকের কুমিল্লা, ফেণী, নোয়াখালী অঞ্চলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতির ভয়াবহতা দেখেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের লক্ষাধিকেরও অধিক মানুষ। উপজেলার অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পরিবার ভিটেমাটি, গবাদী পশু ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এবং আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ১৫হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
দেশের খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ (এমজিআই) যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে চৌদ্দগ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ই আগষ্ট রাতের ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজানের পানিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এবং পাশ্বর্তী নাঙ্গলকোট উপজেলার কয়েকটি গ্রামে অন্তত ১৮ হাজার বন্যার্ত পরিবারের মাঝে দুই ধাপে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে মেঘনা গ্রুপ। গত ২৫শে আগষ্ট থেকে তাদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের বুদ্দিন গ্রামের মোস্তফা কামালের উদ্যোগে প্রথম ধাপে অন্তত ১৩ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করে। দ্বিতীয় ধাপে অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তৈল, লবন, পেয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি।
দুই ধাপের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন কনকাপৈত নূর মিয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিব উল্লাহ ও কনকাপৈত ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মজুমদার। এদিকে চৌদ্দগ্রামের ১৮হাজার বানভাসি মানুষের পাশে দাড়িয়ে পুরো এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন মেঘনা গ্রুপের এমডি মোস্তফা কামালসহ বিতরণকাজে নিয়োজিত নেতৃবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা।
কনকাপৈত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মজুমদার বলেন, গত ২১ আগস্ট রাতের ভারি বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চৌদ্দগ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। চৌদ্দগ্রামের সার্বিক অবস্থা জেনে পরদিন মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বানভাসিদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করে। কনকাপৈত নূর মিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে শুকনো খাবারগুলো ট্রাক্টরভর্তি করে প্রত্যেক গ্রামের সামাজিক ব্যক্তিবর্গের নিকট হস্তান্তর করা হয়। সামাজিক নেতৃবৃন্দ পানিবন্দি মানুষের মাঝে সেই খাবার বিলিয়ে দেন। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে আবারও সাড়ে ৮ হাজার পরিবারের জন্য প্যাকেটভর্তি চাল, ডাল, তেল, লবন, পেয়াজ বিতরণ করা হয়। এসময় তিনি আরও বলেন, চৌদ্দগ্রাম এবং নাঙ্গলকোটের একাংশের বানভাসিদের সেবায় এগিয়ে আসায় মেঘনা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামালকে চৌদ্দগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছে সাবেক এমপি ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের।
কনকাপৈত নূর মিয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিব উল্লাহ জানান, দুই ধাপে বন্যার্ত মানুষের পাশে অন্তত ১৮ হাজার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে মেঘনা গ্রুপ। শুধু খাদ্য বিতরণ নয় বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতেও মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মোস্তফা কামাল অংশগ্রহণ করবেন। বন্যা পরবর্তী পুরো সময়ে তিনি সার্বক্ষণিক কনকাপৈত সহ পুরো চৌদ্দগ্রামের সমস্যাগ্রস্ত মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন। এছাড়াও আগামী শুক্রবার কনকাপৈত কলেজে অনুষ্ঠিতব্য ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পে হাজারো মানুষের জন্য ঔষধের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার রহমত উল্লাহ বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চৌদ্দগ্রামের হাজার হাজার মানুষের পাশে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে পাশে দাড়িয়ে নজির সৃষ্টি করেছে মেঘনা গ্রুপ। গ্রুপের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামালের এ অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।