বুধবার, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
Homeঅপরাধওয়াসা ভবন এখন সাংবাদিক নির্যাতনের আতুর ঘর!

ওয়াসা ভবন এখন সাংবাদিক নির্যাতনের আতুর ঘর!

নিজস্ব প্রতিবেদক :

spot_img

বক্তব্য নিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার ঢাকা প্রতিদিনের দুই সাংবাদিক!!
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ওয়াসা ভবনে ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ঢাকা প্রতিদিনের দু’জন অনুসন্ধানি সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার ও মো: ইস্রাফিলের সাথে এই ঘটনা ঘটে । ঐদিন তাদের গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে অপমান, অপদস্ত ও চরম হয়রানি করেন ঢাকা ওয়াসার স্বঘোষিত সিবিএ নেতা আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারিসহ তাদের সহযোগীরা।

পরবর্তীতে তেজগাঁও থানার সহকারী পরিদর্শক(এস আই) আমিনুর রহমানের যোগসাজশে চাঁদাবাজি মামলা দেয়ার জোর প্রচেষ্টা।

ওয়াসার দুর্নীতিগ্রস্ত একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মনির হোসেন পাটোয়ারি, যিনি অবৈধ উপায়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এছাড়া ওয়াসার আউটসোর্সিংয়ের কাজে দুই ধাপে নিয়োগ দেয়া ১৬২ জন কর্মচারীর নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতি করে আত্মীয়-স্বজনসহ নিজের ছেলেকে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে তদবির বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে মনির হোসেন পাটোয়ারির বিরুদ্ধে। মিরপুর ২ নম্বর কেন্দ্রীয় মন্দিরের পিছনে পৌনে দুই কাঠার একটি প্লটে “অস্থায়ী নিবাস” নামের ৬তলা একটি বাড়ি, যার হোল্ডিং নম্বর- বাসা -০৩, রোড-০৭, ব্লক- এফ,সেকশন ২,মিরপুর, ঢাকা ১২১৬।

এছাড়া আরও বেশ কিছু তথ্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য ঢাকা প্রতিদিন থেকে এসাইনমেন্ট দেওয়া হয় সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার ও মোঃ ইস্রাফিলকে।গত ৩০ নভেম্বর মনির হোসেন পাটোয়ারীকে ফোন করে তার বক্তব্য জানতে চায় সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার। তবে মুঠোফোনে বক্তব্য না দিয়ে ব্যস্ত আছি বলে পরেরদিন অফিসে এসে বক্তব্য নেয়ার জন্য বলেন মনির পাটোয়ারি।
পরের দিন পহেলা ডিসেম্বর মনির হোসেন পাটোয়ারির বাড়ির ঠিকানা সঠিক কি না, তা যাচাই করতে আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে তার বাড়ির সামনে যান সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার ও মো: ইস্রাফিল। সেখানে বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী ওই বাড়ির মালিক যে মনির হোসেন পাটোয়ারি এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।

কিছু সময়ের মধ্যেই কোন এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার ফোন আসে সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদারের মুঠোফোনে। ওই ব্যক্তি নিজেকে ডিজিএফআইয়ের সার্জেন্ট সৌরভ পরিচয় দিয়ে বলেন, মনির হোসেন পাটোয়ারি তার মামা। আপনি মনে হয় তার বিষয়ে তদারকি করছেন। তখন সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার তাকে বলেন, জি কিছু তথ্যের বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য আমি তাকে ফোন করেছিলাম। মনির সাহেব আমাকে আজকে তার অফিসে যেতে বলেছেন। তবে আমি তাকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করছেন না। তখন সৌরভ নামের ওই কর্মকর্তা বলেন, ঠিক আছে আপনি তাহলে তার অফিসে যান, আমি আমার মামাকে বলে দিচ্ছি আপনার সাথে দেখা করে কথা বলার জন্য। এরপরে কারওয়ান বাজার ওয়াসা ভবনের নিচে গিয়ে মনির হোসেন পাটোয়ারী কে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের, ওয়াসা ভবনের ইউনিয়ন অফিসে যেতে বলেন।

তাদের অফিসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন লোকের উপস্থিততে বেশ কিছু সময় ধরে খুব ভালোভাবেই কথা হয়েছিলো আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারীর সাথে। হয়তো পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, হঠাৎ করে প্রাসঙ্গিক কথার জবাব দিতে না পেরে চড়াও হন দুই সাংবাদিকের উপর। তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড, মানিব্যাগ সবকিছু ছিনিয়ে নেয় আজিজ ও মনির বাহিনি। প্রায় দু’ঘন্টা যাবত মানসিক নির্যাতন করার পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ আসলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের সহকারী পরিদর্শক(এস আই) আমিনুর রহমানের যোগসাজশে চাঁদাবাজির মামলা দেয়ার ভয়-ভীতি দেখাতে শুরু করেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের ভুমিকা যেভাবে বিতর্কিত করে সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে!!!
তেজগাঁও থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এস আই) আমিনুর ঘটনাস্থলে এসে কানাগুষা শুরু করেন ওয়াসা কর্মচারীদের সাথে। প্রথমে আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারীকে সাংবাদিকদের নামে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা ঢুকে দেয়ার পরামর্শ দেন এস আই আমিনুর। তিনি বলেন আপনারা সাংবাদিকদের সাথে যা করেছেন তাতে এভাবে ছেড়ে দিলে আপনাদের পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। তাই আপনারা বলবেন, এর আগেও আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এখন আবার এসেছে ৫লাখ টাকা নেয়ার জন্য। এসআই আমিনুরের পরামর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য মনির হোসেন পাটোয়ারী ও তাদের লোকজনসহ দুই সাংবাদিককে থানায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে মামলা না দিয়ে সাংবাদিকদের জিম্মি করে ব্যবসা করার পরামর্শও দেন এস আই আমিনুর ।

পরে তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোবারক হোসেন উভয় পক্ষের কাছ থেকে পুরো ঘটনা জানতে চাইলে, মনির হোসেন পাটোয়ারি, এসআই আমিনুরের শেখানো বুলি আউড়ে বলেন সাংবাদিকরা তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। আমি তাদের নামে চাঁদাবাজির মামলা করতে চাই। পরক্ষণে, সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন, আমরা শুধুমাত্র তার একটি বক্তব্য নেয়ার জন্য ওয়াসা ভবনে গিয়েছিলাম এবং তারাই আমাদেরকে বক্তব্য নিতে তাদের অফিসে ডেকেছে। তাছাড়া মনির সাহেব আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির যে অভিযোগটি উপস্থাপন করেছেন তার কোন প্রমাণ যদি সে দিতে পারেন তাহলে আপনি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করুন আমাদের কোন আপত্তি নেই। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, আমরা সবাই মানুষ, শুধু শুধু কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না তুলে বিষয়টি এখানে সমাধান করা যায় কি’না আপনারা একটু ভেবে দেখুন। পরবর্তীতে ঢাকা প্রতিদিনের চীফ রিপোর্টার পীর তানিম আহমেদ ও মফস্বল সম্পাদক রিয়াজুর রহমান রিয়াজসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও মনির হোসেন পাটোয়ারীর লোকজন বিষয়টি থানাতেই মীমাংসা করেন।

তবে ওইদিনের যাবতীয় ঘটনার সবকিছু সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদারের মোবাইল ফোনের গোপন ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ড হয়। কিন্তু মোবাইলের যাবতীয় ডকুমেন্টস এবং সব ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করে দেন মনির পাটয়ারির সহযোগীরা। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সমস্ত ডকুমেন্ট ও ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে দেখা যায় দুই ঘন্টা ৫১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। আর সেই ভিডিওতেই সবার মুখোশ উন্মোচন হয়। সাংবাদিকতার প্রত্যেকটি ধাপে এভাবেই বিপদ লুকিয়ে থাকে। ঐদিন গোপন ক্যামেরা চালু থাকার কারণেই হয়তো আজ এত কিছু উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে মুখোশধারীদের আসল উদ্দেশ্য।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here