সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি \
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের আল-আমিনের স্ত্রী আমিনা (২৫) এর বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আমিনা অভিযোগ করে জানান যে, গত ৯ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১০টায় আমার পাশের বাড়ি ইয়াসমিনের বাড়িতে পানের জর্দ্দা আনতে যাই। গিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই।
এর কিছুক্ষন পরই ইয়াসমিন জানায় তার বাড়িতে থাকা চাউলের ড্রামে নাকি ১.৫ ভরি ওজনের স্বর্ণ আমি চুরি করে নিয়েছি। সাবেক ইউপি মেম্বার তোফাজ্জল হোসেন আনুমানিক রাত ৮টার দিকে এসে আমাকে ঘর থেকে ডেকে এনে ১ লাখ টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। অথচ, আমি চুরি না করেও আমি ১ লাখ টাকা কেন দিবো এ কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা চলে যায়।
ইয়াসমিন সন্দেহ করে আমিনার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেন। কিন্তুু কোন চাক্ষুস প্রমাণ দেখাতে পারেন নাই।
এই এলাকাবাসীর কোন ব্যক্তিই আমিনা স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে গেছে চাক্ষুস দেখে নাই। সকলেই শোনা কথার ভিত্তিতে আমিনাকে অসহায় পেয়ে অভিযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অসহায় পেয়ে আমিনাকে এলাকার কিছু দুষ্কৃতিকারীর ১ লাখ টাকা জরিমানা দাবি করে। কোনো উপায় না পেয়ে আমিনা শিবপুর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। যেহেতু উক্ত বিষয়টি এলাকার লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে বিধায় বর্তমানে আমিনা চুরি না করেও অপবাদ বয়ে বেড়াচ্ছেন।
গত রবিবার ১৪ই জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের সাধারন মানুষ বক্তব্য দিচ্ছেন আল-আমিনের স্ত্রী আমিনাকে চুরি করতে কেউই দেখে নাই। অথচ তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মান-সম্মান ক্ষুন্ন করতে একটি কু-চক্রী মহল প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আমিনার মামা ছাত্তার জানান, উক্ত বিষয়টি সমাধানের জন্য আমি ইয়াসমিনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি নিজে যতটুকু জানি আমার ভগ্নিকখনও এরকম কাজ করেনি। সন্দেহমূলক তাকে চুরির অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আমিনার শ্বশুর মোতালিব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, আমার ছেলের বউকে কেউ চুরি করতে দেখেনি। ইয়াসমিন সন্দেহ করে উক্ত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ইয়াসমিনের শ্বশুড় সেইরা জানান, আমি নিজের চোখে আমিনাকে চুরি করতে দেখিনি। শুনেছি, সেদিন আমার ছেলের বউয়ের ঘর থেকে আমিনা চুরি করেছে। মানুষের শোনা কথার ভিত্তিতে চুরির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন সংবাদকর্মী রুদ্রকে মোবাইল ফোনে জানান, তার ইয়াসমিনের বাড়ির লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমিনার ঘরে গিয়েছিলাম। আমিনা হঠাৎ আমাকে দেখে আমার পায়ে পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমিনা জানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এলাকার সামাজিকতার স্বার্থে বলি তুমি যদি সত্যিই স্বর্ন নিয়ে থাকে তাহলে চুপচাপ দিয়ে দাও। অথচ একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে আসছে আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য। আমি সমাজের সঠিক বিচার করতে সর্বদাই সৎ আদর্শ নীতি প্রয়োগ করি।
এদিকে নরসিংদী জেলার আইনজীবী সমিতির সদস্য আব্দুস সালাম এডভোকেট জানান, বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইন ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তিকে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করলে মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ৫০০ ধারায় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।
এদিকে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছেন সাধারন মহল।
এদিকে মানবিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, প্রবাসীর স্ত্রীরা অনেক ক্ষেত্রে অসহায় থাকে। কারন, তাদের স্বামীরা বিদেশ থাকে। যার কারনে এই সুযোগ অবলম্বন করে কিছু কুচক্রী মহল বদনাম ছড়িয়ে সুনাম নষ্ট করার জন্য পায়তারা করে। প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রশাসন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয় এক্ষেত্রে।