দুমকি উপজেলা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) ভেঙে পদের চেয়ে অতিরিক্ত লোক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকলেও দুটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিজ্ঞপ্তিতে একজনের কথা বলে নেওয়া হয়েছে দুজন। প্রশাসনের প্রতি একাধিকবার আপত্তি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ একাধিক শিক্ষক, কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। তবে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি সচিব। গত বছরের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ৩৯ জনের নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। তবে চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর ৫৮ জনকে নিয়োগ দেয় রিজেন্ট বোর্ড।
এর মধ্যে সেকশন কর্মকর্তা পদে ৩ জনের স্থলে ৬ জন, ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্ট ৬ জনের স্থলে ৯ জন ও অফিস সহায়ক পদে ৫ জনের স্থানে ১১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী জনবল কাঠামোর বাইরে অনুমোদনহীন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, ৩০ জন সেকশন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে কর্মরত আছেন ৪৪ জন। তারপরও সেখানে নতুন করে ৬ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদন না থাকলেও আইকিউএসি বিভাগের হিসাবরক্ষক পদের ১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিতর্ক এড়িয়ে যেতে পারেননি নিয়োগ বোর্ড। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকলেও পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের নিয়োগ দিয়েছে পবিপ্রবি প্রশাসন। গত বছরের ২৬ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ওই পদে ১ জনের কথা বলা হলেও কার্যত ২ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয়নি।
একইভাবে কৃষিতত্ত্ব বিভাগে ১ জনের পরিবর্তে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের মতামত উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্টসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানের রিকুইজিশন ছাড়া তাদের মতামত না নিয়েই কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া নীতি বহির্ভূত। বিভাগীয় প্রধানদের ‘অবমূল্যায়ন’ করে জনবল নিয়োগে বিভাগীয় কার্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুমোদনের বাইরে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়ার মতো যথেষ্ট অর্থের জোগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নেই।
এতে শিক্ষকদের পেনশন খাত (প্রভিডেন্ট ফান্ড) থেকে খরচ হতে পারে। ফলে শিক্ষকরা অবসরে গেলে সঠিক সময়ে পেনশন ভাতা না পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। নিয়মবহির্ভূত ও অনুমোদনহীন পদে নিয়োগের ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তিনি কথা বলতে রাজি হননি । জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার (অ.দা) প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘বার বার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন বিষয়। সে কারণে ফাঁকা আসনে জনবল বাড়িয়ে নিয়োগ দিয়েছি।’
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিছু বিভাগে শিক্ষক সংকটের কারণে ইউজিসির অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দিতে হয়েছে। আর যেসব পদে ইউজিসির আর্থিক অনুমোদন নেই, সেসব পদে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে অর্থ খরচ করা হবে না।’ নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্তের গুঞ্জনে যাদের নাম শোনা গিয়েছিল, তারাই নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ কাকতালীয়’ বলে জানান।