শুক্রবার, নভেম্বর ২৯, ২০২৪
Homeঅপরাধগুলিতে নিহত হওয়ার পরে সংগঠনের নেতা কর্মীদের ওপর শুরু হয় জুলুম নির্যাতন

গুলিতে নিহত হওয়ার পরে সংগঠনের নেতা কর্মীদের ওপর শুরু হয় জুলুম নির্যাতন

spot_img

১০ জানুয়ারী ১৯৭৩ সালে নবাবগঞ্জের এক জনসভা শেষে প্রত্যগমনকালে প্রতিপক্ষের গুলিতে শাহাদত হোসেন বাদল নিহত হওয়ার পরে সংগঠনের নেতা কর্মীদের ওপর নেমে আসে নানা ধরনের জুলুম ও নির্যাতন। এসময় ছাত্রলীগ নেতা শরীফ,আনোয়ার(বরুন্ডি),মনসুর আলম খান(ঘিওর) প্রমুখের সাথে ইকবাল হোসেন খানের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারী করা হয়। সেই থেকেই শুরু হয় তাদের রাজনৈতিক ফেরারী জীবন। এরই মধ্যে একদিন আনোয়ারও নিহত হন। শরিফ ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করেন।

ইকবাল হোসেন খান গণমানুসের সাথে মানিকগঞ্জেই রয়ে যান। তিনি গ্রেফতার এড়ানোসহ সংগঠন বৃদ্ধিতে নিঝুম নিশিতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে বেরিয়েছেন। অনাহারে অর্ধ্বাহারে এবং অর্থের কষ্টে কত দিন ও রাত যে অতিবাহিত হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। সারাদিন হাটতে হাটতে কোন এক বাড়িতে গিয়ে একমুঠো ভাত,এক টুকরো রুটি চেয়ে কোনমতে জীবন বাজি রেখে সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। ছোট ছোট এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যে এগুলো বলতে গেলে যেন এক ইতিহাসের বই হয়ে যাবে। যাহোক হূলিয়া প্রত্যাহার হলে আবার প্রকাশ্য জীবনে ফিরে আসেন। তারপর তিনি নতুন করে দলের গুণগত মান ঠিক রেখে সাংগঠনিক কঠামো বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করেন। ততদিনে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ এবং অধ্যাপক মজিবর রহমান প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন বলতে গেলে বিদায় নিয়েছেন। ফলে তিনি হয়ে ওঠেন জেলা জাসদের অবিংসবাদি নেতা ও অন্যতম রুপকার। তিনি এই চড়াই উতড়াইয়ের মধ্যেও ১৯৮০ সালে শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজ থেকে কৃতিত্তে¡র সহিত বি.এ. পাশ করেন।

ইকবাল হোসেন খান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন মানিকগঞ্জ জেলা জাসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কৃষক জোটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলন সংগ্রামের সাথে স্থানীয় আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন স্থানীয় আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জাতীয় আন্দোলন বিকশিত হয়। তিনি মানিকগঞ্জ নয়াকান্দি বাঁধ কাটা আন্দোলন, ১৯৮৬ সালে কৃষি ঋণ মওকুফ আন্দোলনসহ ছোট-বড় অনেক স্থানীয় আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। আশির দশকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে জনমত গঠনে নিজ জেলা ও কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের নানা প্রান্তে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি তিন মাস কারাবরণ করেন।

কমরেড ইকবাল হোসেন খান জীবনে কোন চাকরি বাকরি করেন নাই। পেশাগত জীবন বলতে গেলে ১ম শ্রেনীর একজন ঠিকাদার হলেও সার্বক্ষণিক রাজনীতির কারণে এই পেশায় তিনি সফল হতে পারেননি। গ্রামের বাড়িতে তাঁর একটি কৃষি খামার থাকলেও তেমন সফলতা পাননি। সামাজিকভাবে তিনি একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি বরুন্ডি হাই স্কুল ও ফারির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং হাজী জহির উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। এছাড়ও তিনি মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা প্রতিষ্ঠার অন্যতম রুপকার। মানিকগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় ১৯৯৫ এবং ২০০৯,২০১১ ও ১৩ সালে আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যন ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনসহ বিজয় মেলার স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য থেকে নানা গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১ ও ৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মশাল প্রতিক নিয়ে মানিকগঞ্জ সাটুরিয়া সংসদীয় আসন থেকে সম্মানের সহিত প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে চিন ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সফর ও অবিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড বøব কর্তৃক সনদ ও ক্রেষ্ট অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান ও সার্বক্ষণিক রাজনীতির জন্য তিনি মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা থেকে ২০১১ সালে সম্মাননা স্মারক অর্জন করেন। মুলত একজন ইকবাল হোসেন খান পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি পৈত্রিকভাবে বেশ বনেদি পরিবারের সন্তান ও তার স্ত্রী সরকারি চাকরি করাতে সংসারে তার তেমন বেগ পেতে হয়নি। তিনি যৌবনে একজন দক্ষ ফুটবলার ছিলেন। তিনি ওয়ারী ক্লাবে ১ম বিভাগে খেলে বেশ সুনাম অর্জন করেন।

মানিকগঞ্জের গণমানুষের অকৃত্রিম বন্ধু মহান এই নেতা গত ২৫ জুন ২০১৯ সালে ৬৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। জাসদের রাজনীতির উত্থান-পতনে তাকে বেশ আহত করলেও তিনি জাসদের মশাল ও লাল ঝান্ডা ধরেই আজীবন ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জননেতা হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আক্তার নেতৃত্বাধীন জাসদের সাথেই ছিলেন। একজন ইকবাল হোসেন খান আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, সমাজ পরিবর্তন ও সমাজতন্ত্র কায়েমে সংগ্রাম করেছেন। তার পথেই জাসদ সংগ্রামের পথে অবিচল রয়েছে। দেশে দুর্নীতি-লুটপাট-অনাচারের দুর করে সামাজিক মালিকানার ন্যায্যতার সামজ বিনির্মাণে যে সকল জাসদের নেতা-কর্মীরা রুখে দাঁড়িয়ে জীবনপণ করে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের অন্যতম বীর সেনানী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন খান। জাসদের নেতা-কর্মীদের সমাজ পরিবর্তন ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জীবনপণ সংগ্রামের মধ্যেই প্রয়াত নেতা ইকবাল হোসেন খান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ খবর

spot_img
আরও খবর
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here