ছাত্রলীগ নেতাকে পেটানোর ঘটনায় অনেক নাটকীয়তার পর অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তাকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এডিসি হারুন কাণ্ডের শুরু থেকে এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম শোনা যায়। তিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সহধর্মিনী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। তিনি ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা।
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে পেটানোর ঘটনার সময় এডিসি সানজিদাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও এডিসি সানজিদা ‘হারুন কাণ্ডে’ মুখ খুলেছেন।
একটি বেসরকারি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এডিসি সানজিদা ওই দিনের ঘটনার জন্য ‘এপিএস’ আজিজুল হককে দায়ী করেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার স্বামীই হারুন (হারুন অর রশিদ) স্যারকে প্রথমে আঘাত করেছে।’
ঘটনার বনর্না দিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ আমার বুকে ব্যথা হয় তারপর আমি এডিসি হারুন স্যারকে বলে বারডেম হাসপাতালে এক ডাক্তারের সিরিয়াল নেই। সেই ডাক্তার আসতে দেরি করায় আমি হারুন স্যারের সাথে হাসপাতালে একটু সময় কাটাই তখন আমার স্বামী গুন্ডাপান্ডা এনে হারুন স্যারকে প্রচুর মারধর করে এবং আমাদের দুজনের অন্তরঙ্গ ভিডিও করার চেষ্টা করে, আমার হারুন স্যার একদম নির্দোষ, আমার স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল দোষী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পরকীয়ার সম্পর্কের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (হারুন) আমার সিনিয়র কলিগ। এর বাইরে আর কোনো বিষয় নেই। এই ঘটনার পর স্বামীর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।
এ ঘটনার জেরে রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে মীমাংসা করেন।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক নারীর সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেসময় ওই নারীর স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান এবং তাদের দুজনকে একসঙ্গে পান। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশিদ।
এ ঘটনায় গত রোববার সেপ্টেম্বর বিকেলেই ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুইদিনের মধ্যে দ্রুত তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এরপর হারুনকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। আবার ওইদিন বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়।